top of page

দুশ্চিন্তা ! আপনার প্রধান দুশমন

Updated: Mar 9, 2019


কথায় আছে বনের বাঘে নয়,মনের বাঘে খায়।দুশ্চিন্তা আপনাকে ভেতর থেকে কুড়ে কুড়ে খেয়ে ফেলে এবং দিন দিন ভেতর থেকে আপনি নিঃশেষ হয়ে যান।

একজন সাইকোলজির প্রফেসর তার শিক্ষার্থীদের দুশ্চিন্তা, মানসিক অবসাদ কি ধরণের ক্ষতি করে সে বিষয়ে পড়াচ্ছিলেন। পড়ানোর মাঝখানে তিনি হঠাৎ করে শিক্ষার্থীদের সামনে একটি পানির গ্লাস তুলে ধরলেন। তারা ভেবে নিলো প্রফেসর বোধহয় সেই গৎবাঁধা গ্লাস অর্ধেক ভরা নাকি অর্ধেক খালি সেই প্রশ্ন করবেন। তাদের ভুল প্রমাণিত করে দিয়ে প্রফেসর একেবারেই অন্যকিছু জিজ্ঞেস করে বসলেন!

তিনি প্রশ্ন করলেন, "আমার হাতে ধরা গ্লাসটির ওজন কত? কেউ বলতে পারবে?" শিক্ষার্থীরা যে যার ধারণা অনুযায়ী উত্তর দিলো। কেউ বললো ২০০মি.লি, কেউবা ৩০০, কেউ কেউ আবার বললো ৫০০মি.লি! তখন প্রফেসর বললেন, "আমার মতে এই গ্লাসের আসল ওজন কোনো গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার না। গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে কতক্ষণ আমি এই গ্লাসটি ধরে রাখছি। যদি আমি কিছুক্ষণ এই গ্লাসটি ধরে রাখি আমার কাছে এই গ্লাসটি তেমন ভারি মনে হবেনা। যদি কয়েক ঘণ্টা ধরে রাখি তাহলে বেশ ভারি মনে হবে। আর যদি এর থেকেও বেশি, হয়তোবা সারাদিন ধরে রাখি তাহলে এই হালকা পানির গ্লাসটিকেই আমার মনে হবে বিশাল ভারি কিছু।"

ছোট্ট এই উদাহরণের মাধ্যমে প্রফেসর আসলে বোঝাতে চাচ্ছিলেন মানুষের মস্তিষ্কে দুশ্চিন্তা বেশিক্ষণ ধরে রাখা উচিত না। আমরা যদি কোনো ব্যাপার নিয়ে কিছুক্ষণ চিন্তা করি তা তেমন সমস্যা সৃষ্টি করেনা। কিন্তু যখনই আমরা কোনো ব্যাপার নিয়ে বারবার চিন্তা করতে থাকি, চিন্তা তখন দুশ্চিন্তায় রূপ নেয়। আর সারাদিন কোনো বিষয় নিয়ে দুশ্চিন্তা করলে আমরা মানসিক অবসাদে আক্রান্ত হই। আমাদের হাত যেমন সারাদিন ঐ গ্লাসটির ওজন নিতে পারবেনা, আমাদের মস্তিষ্কও তেমনি সারাক্ষণ দুশ্চিন্তা নিতে পারেনা।



শারীরিক স্বাস্থ্যের প্রতি আমরা যত্নবান হলেও, মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিতে আমরা ভুলে যাই। হয়তো সারাদিন শারীরিক কোনো অসুস্থতা নিয়েই ভাবছি, কিন্তু এতে যে শরীরের সাথে সাথে মনটাও অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে সেদিকে আর খেয়াল করিনা। মনের সুস্থতার ব্যাপারে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মানুষ উদাসীন হয়। অথচ এই মনই কিন্তু পুরো দেহকে সচল রাখে। মনকে সুন্দর আর পরিপাটি করে রাখা জরুরি কারণ সুন্দর মন আমাদেরকে সুন্দর দিন উপহার দেয়।

হ্যারী পটারের লেখিকা জে.কে. রাউলিং তার এক বইয়ে লিখেছিলেন, "দুশ্চিন্তা করা মানে দুইবার কষ্টে ভোগা।" খুব সত্যি একটি কথা! কাল কি হবে তা কেউই জানেনা। তাই কালকের চিন্তা করে আজকের দিনটা নষ্ট করা অপচয় ছাড়া আর কিছু নয়। মানুষের জীবনের পরিসর খুব বড় নয় তাই সময় খুব দামী। অথচ দেখা যায় দিনের পর দিন এই দামী সময় মানুষ অযাচিত চিন্তাদের উপর খরচ করে যাচ্ছে। অনেকে নিজের অজান্তেই খরচ করছে! খেয়াল করে দেখলে দেখা যাবে সারাদিনের অর্ধেকেরও বেশি সময় কেটে যাচ্ছে নানা রকম হতাশ ও নেতিবাচক চিন্তায়। যেই চিন্তা পরবর্তীতে কোনো কাজে তে আসেই না বরং সময় নষ্ট করে শুধু!

অনেকে আবার ভাবছেন, বললেই তো আর সব চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলা যায়না! চিন্তা তো আপনা আপনি মাথায় এসেই যায়! তাহলে কি করা যায়?

সত্যি কথা বলতে, চিন্তারা যত সহজে মাথায় ঢোকে তত সহজে যদি পড়ালেখা মাথায় ঢুকতো তাহলে পৃথিবীতে আরো গোটাকয়েক নিউটন, আইনস্টাইন পাওয়া যেত। তবে দুশ্চিন্তা দূর করার যে কোনো উপায় নেই, এমনও কিন্তু না। দুশ্চিন্তা দূর করতে জীবনের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বাড়াতে হবে। জীবনের অসংগতি এবং চ্যালেঞ্জিং বিষয়গুলোকে সহজভাবে নিতে শিখতে হবে। মোদ্দাকথা যেসব ব্যাপার আমাদের বারবার ভাবায় সেই ব্যাপারগুলো মাথা থেকে দ্রুত বের করে দিয়ে অন্য কিছুতে মনোনিবেশ করতে হবে। দরকার শুধু নিজের চেষ্টা আর সদিচ্ছা।

নিজের জীবনকে সুন্দর করে সাজানোর দায়িত্ব আমাদের নিজেদেরই। আর সুন্দর জীবনের মূল শর্ত সুন্দর মন। সুন্দর মন গড়তে হলে সকল প্রকার দুশ্চিন্তা থেকে নিজেকে বিরত রাখতে হবে। সারাদিনে ছোটখাট, হয়তো বড়ই কোনো না কোনো ঘটনা ঘটতেই থাকে যা আমাদের মাথায় গেঁথে থাকে। সারাদিনের এসব চিন্তাকে সন্ধ্যা হতে হতেই ঝেড়ে ফেলতে হবে। রাতে চিন্তার ঝুড়ি খালি করে তবেই ঘুমাতে যেতে হবে। আর যদি গতদিনের চিন্তার ভারে আপনি আজকের দিনে সারাক্ষণ অবসাদে ভুগতে থাকেন তাহলে বুঝতে হবে হাতের গ্লাসটি নামিয়ে রাখার সময় এসে গেছে।



226 views0 comments

Comments

Couldn’t Load Comments
It looks like there was a technical problem. Try reconnecting or refreshing the page.
bottom of page